মাদ্রাসায় কন্যাশিশু এবং তরুনীদের উপরে যৌন নির্যাতন এবং তার প্রতিকার

দেশব্যাপী কন্যা শিশু এবং নারীদের উপর নির্যাতন বেড়েই চলেছে। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ধর্মীয় এবং কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে মাদ্রাসায় পাঠানোর কারণে তাদের উপকারের বদলে অনেকেই আজীবনের জন্য একটা বিষাক্ত স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরছে। এর কারণ হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা নির্যাতিত, ধর্ষিত হচ্ছে তারা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলায় একটি নুরানী মাদ্রাসায় চারজন কন্যাশিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে তাদের অভিভাবকরা মামলা দায়ের করেন সেই মামলায় অভিযুক্ত মাদ্রাসাটির শিক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। প্রায়শই আমরা পত্রিকা কিংবা খবরে দেখি অমুক মাদ্রাসার শিক্ষক গ্রেপ্তার হলেন শিশু শিক্ষার্থী/তরুনীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে।
যে মাদ্রাসাগুলোতে শুধু কোরআন পড়ানো হয়, সে ধরণের মাদ্রাসাকে নুরানী মাদ্রাসা বলা হয়।জয়পুরহাট ছাড়াও মোজাহিদপুরে নুরানী মাদ্রাসা বলে একটি মাদ্রাসা আছে। ওখানে স্থানীয় বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া হত ভোরবেলা। যেই কন্যা শিশুরা কুরআন শিক্ষার জন্য যেত তারা ১২, ১৩ বা ১১ বছর বয়সের, এই সুযোগে ঐ শিশুদেরও যৌন নিপীড়ন করা হয় এবং এ ব্যাপারে মামলাও হযেছে। এরপর ঐ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে কোর্টে সোপর্দ করা হযেছে।
দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় একটি মহিলা আবাসিক কওমী মাদ্রাসায় ১৩ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসাটির হোস্টেল সুপারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকদিন আগে।
আবাসিক মাদ্রাসা থেকেই শিশু শিক্ষার্থীদের শারিরীক নির্যাতন এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ বেশি আসে। এখানে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারনে এবং অভিভাবকদের দায়িত্ববোধহীন হওয়ার কারণেই এইসব ঘটনা বেশি ঘটছে। কেননা অভিভাবকরা সন্তানকে আবাসিক মাদ্রাসায় পাঠিয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকেন। তারা নিয়মিত খোজ খবর নেন না। যার ফলশ্রুতিতে অনেক মাদ্রাসা শিক্ষক এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। তারা ভেবে নিচ্ছে যেহেতু বাবা-মা নিয়মিত খোজ খবর রাখে না তাই তারা যেকোনো ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যাবে। কেননা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বাসায় যোগাযোগ করার কোন উপায় নেই যদি না বাসা থেকে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এছাড়া তাদেরকে নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করাতো আছেই। এমনকি যেই কুরআন শিক্ষার জন্য তারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে সেই পবিত্র কুরআন ছুয়ে তাদের থেকে শপথ নেওয়া হয় যাতে করে তারা কাউকে কিছু না জানায়। জানানো হলে তারাই বরং পাপের ভাগীদার হবে এই বলে তাদের ব্রেইনওয়াশ করা হয়।
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকাতে বাচ্চারা অনেক বেশি অনিরাপদ থাকে। সামগ্রিকভাবে বাচ্চাদের অনিরাপদ পরিবেশটাই সমস্যা। এছাড়া বাচ্চারা এ ধরণের ঘটনা ঘটলে তা বলতে বা অন্য কাউকে জানাতে ভয় পায় এবং অনেক সময় তারা বিষয়টা বুঝতেও পারে না। এটাও একটা বড় সমস্যা।
ফেনীর সোনাগাজীতে একটি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পর তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। যৌন নিপীড়ন এবং হত্যা মামলার বিচারে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষসহ ১৬জনের ফাঁসির রায় হয়েছে।
সেই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করলেও এরপরও মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়নের ঘটনা বন্ধ হয়নি এরপরও বিভিন্ন সময়ে অনেক অভিযোগ উঠেছে।
মূলত, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। এছাড়াও মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব বোর্ড বা কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু সেখানেও ঘাটতি আছে। বেশিরভাগ সময়ে তারাই নানাভাবে চেষ্টা করে এই ধরনের ঘটনা যাতে ধামাচাপা দেওয়া যায় এবং মাদ্রাসার বাইরে যাতে এধরনের খবর না যায়। তারা কিছুতেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নারাজ। এথেকে যেটা হয় যে, অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক ধরে নেয় যাই করুক প্রতিষ্ঠান তার কিছু হতে দেবে না আর এদিকে ভুক্তভোগী এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ধরে নেয় তারা বিচার চাইলে পাবে না তাই অনেকেই দিনের পর দিন মুখবুজে এই ধরনের অত্যাচার সহ্য করে যায়।
মাদ্রাসা যেধরনেরই হোক না কেন কওমী, এবতেদায়ী বা নুরানী-বিভিন্ন ধরণের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত।
দেশে কওমী মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে ছয়টি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। তাদের উচিৎ শক্তভাবে মাদ্রাসাগুলোকে নিয়মিত তদারকি করা এবং কোন অভিযোগ পাওয়ার পরে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি কি ব্যবস্থা নিল তা খতিয়ে দেখা। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এই ধরনের যৌন নির্যাতনের ঘটনা কখনোই কমবে না।

Similar Posts

25 Comments

  1. এই লেখককে দেশ থেকে ত্যাজ্য করা উচিত, কারন ইনি আওয়ামীলীগ এর সমালোচনা ছাড়া আর কিছু পারেন না।

  2. আওয়ামীলীগ মানেই সন্ত্রাসবাদ, এ আর নতুন কিছু কি!

  3. ভালোয় ভালোয় বলতেসি, সাবধান হইয়া যা লুতফুর আর নাহলে যদি তোর কল্লা কাটা পড়ে তাহলে কিন্তু আমাকে কিছু বলবি না, আমি সাবধান করেছিলাম।

  4. শাউয়ার পোলা তোরে সামনে পাইলে ইচ্ছামতো জুতা দিয়া পিটাইতাম

  5. আমার নেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হয়না তা প্রমান পাওয়া গেলো আরেকবার এই আন্দোলন এর মাধ্যমে, কি সুন্দর করে ধৈর্যের পরিক্ষা দিল সরকার তথা সকল প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আমি আসলেই মুগ্ধ, কিন্তু এই বি এনপি পন্থি কিছু লোকজন শুরু থেকেই আন্দোলনকে বাতিলের জন্য ভুয়া খবর প্রকাশ করে আসছে, উস্কানিমূলক মন্তব্যও দিচ্ছে। এইগুলো যেমন একটি সামাজিক অপরাধ, তেমনিভাবে আইনগত ভাবেও দণ্ডনীয় অপরাধ। এবং এই লেখক মহোদয় ঠিক এই অন্যায় কাজটাই করেছেন। তাই তাঁকে সামনে পেলে লোকচক্ষুর সামনে কেটে টুকরো টুকরো করে নদিতে ভাসিয়ে দেওয়া হোক- এটাই হবে উনার উপযোগ্য শাস্তি!!!

  6. বিএনপির পোলারা একেকটা চুতমারানির পোলা।

  7. কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের ও আপনারা ছাড়লেন না! কিভাবে এভাবে ভুয়া তথ্য ছড়াতে পারেন?

  8. কিছু হলেই আওয়ামিলিগ এর দোষ খুজে পান কেন আমি বুঝিনা একদম। ওরা মোটেও আওয়ামিলিগ এর ছেলে না। দেখলেই বুঝাযায় এরা আপনার মত জামাতকরমী

  9. মিথ্যা কথা বলার আর জায়গা পেলিনারে খানকির পোলা

  10. আশা করি আমাদের ডিজিএফআই আপনার উপর আইনি ব্যবস্থা নিবেন।

  11. এসব লেখার জন্য তোকে কড়া শাস্তি দিতে হবে

  12. আপনার মত সৎসাহসী মহিলা খুব কম দেখেছি। সত্যের পথে এগিয়ে জান।

  13. একই অবস্থা তোকেও করবো। পার্থক্য হবে যে তোর লাশ আর খুজে পাওয়া যাবে না

  14. তোকে কিভাবে গুম করা হবে তুই টেরও পাবি না

  15. তারেক চোর এর পক্ষ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে এখন নিরীহ ডিজিএফআই এর পেছনে লেগেছেন নাকি?

  16. আপনি যে এতগুলো মিথ্যা বললেন, কোন প্রমাণ আছে কি?

  17. বিদেশে আছেন বইলা কইতে পারতেসেন দেশে আসার চেস্টাও কইরেন না।

  18. লাভ কি? এদের কখনোই কিছু হবে না।কিন্তু সত্য বলার জন্য তো আপনার অসুবিধা হবে।যেখানে থাকেন সাবধানে থাকবেন

  19. এই ধরনের লেখার ক্ষেত্রে যে পর্যাপত পরিমাণ প্রমানের প্রয়োজন হয় সেটা আসলে আমরা দেখতে পাইনি। কারো বিরুদ্ধে এমন একটা লেখা কতটা ঠিক? আশা করি আপনার ব্যাপারে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *